বৃদ্ধ ভদ্রলোক। হাঁটছিলেন লেকের পাশ দিয়ে। সিগারেটওয়ালা একটা বসে আছে। লুঙ্গি প্রায় মালকোঁচ মারা। বারটেন্ডার নিজের দোকানের মদ না খেলেও এ তার দোকানের সিগারেট খাচ্ছে। বৃদ্ধকে তাকাতে দেখে জানতে চাইলো, “চাচা, দেবো নাকি একটা সিগারেট?”

জামাল সাহেব সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন। ইচ্ছে আছে, শক্তি নেই। এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত অশ্লীল একটা কৌতুক মনে পড়ে গেল তার।

বললেন, “চা থাকলে ভালো হতো।”
সিগারেটওয়ালার একই অঙ্গে বহুরূপ। চট করে কোত্থেকে একটা ফ্লাক্স বের করে ফেললো।
“চা-ও আছে, চাচা।”

বাক্যটা জামাল সাহেবের মাথায় ঢুকে গেল। “চাও-আছে চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা” হতেও পারে একটা বাংলা ‘টাং টুইস্টার’। তাদের পাশ দিয়ে খুব সুন্দর দেখতে এক ছেলে আর এক মেয়ে চলে গেল। তাদের হাতে হাত। তারুণ্যের আভা বেরুচ্ছে। আড়চোখে সিগারেটওয়ালাকে তিনি দেখে নিলেন। এদের সম্পর্কে তার একটি অনুমান আছে।

অনুমানটা ভুল নয়। ব্যাটা বকের মতো মাথা বাড়িয়ে মেয়েটার পাছা দেখার চেষ্টা করছে।
তারপর বৃদ্ধকে চায়ের কাপটা দিলো। ওয়ান টাইম কাপ। জীবনের মতোই। জামাল সাহেবের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের একজন রিকি মার্টিন। তার গান রয়েছে ‘কাপ অফ লাইফ’।

“চুমুক দিয়া দেখেন। সেরা একটা চা পাইবেন। আমার বউ বানায়। এক্কেরে ঘরের চায়ের স্বাদ পাবেন।”
“তোমার বাড়ি কোথায়?”
“করাইলে।”
জামাল সাহেব বিনয়ের সাথে জানতে চাইলেন, “সারাদিন এখানে বসে বসে মেয়েদের পাছা দেখে বেড়াও নাকি?”
সিগারেটওয়ালা ভ্যাবাচেকা খেয়ে একটু ‘হেহে’ করলো।

জামাল সাহেব তার কাঁধের ঝোলা থেকে একটা অদ্ভুতদর্শন পিস্তল বের করে ফেললেন।
সিগারেটওয়ালা এবার দ্বিতীয় প্রস্থ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তার মুখ থেকে এ দফায় মৃদু ‘কুঁই কুঁই’ বেরুলো কেবল।

জামাল সাহেব বিনয়ের সাথেই বললেন, “আজকে আমি একটা খুন করতেই বেরিয়েছি। তোমাকে বেশ চরিত্র মনে হচ্ছে। সকালে বউ চা বানিয়ে দেয়। আর সেই চা গুলশান লেকের পাশে বেচতে বেচতে মেয়েদের পাছা দেখে বেড়াও।”

আরেক বার “কুঁই কুঁই” শোনা গেল। সিগারেটওয়ালা বাদশা মিয়া কথা বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু খুব একটা জুত করতে পারছে না।

বৃদ্ধ তাকে উৎসাহ দিলেন, “কিছু বলার চেষ্টা করছো নাকি? দ্রুত বলে ফেল। এই পিস্তলটা দেখছো? এর নাম এমএসপি গ্রোজা। মোটা একটা লোক গায়ের জোড়ে পাদ দিলে যতখানি শব্দ হয়, তার থেকেও কম শব্দ করে গুলি করে। তোমাকে গুলি করে লেকে ফেলে চলে যাবো। কাকপক্ষীও জানতে পারবে না।”

বাদশা মিয়া কোনমতে বললো, “আপনাকে যে চা খাওয়ালাম।”
জামাল সাহেব হাসলেন। তাকে এমনিতেই ভদ্রলোকের মতো দেখায়, হাসলে মনে হয় ফেরেশতা। সেই হাসি দেখে সিগারেটওয়ালা বিভ্রান্ত হয়ে গেল।
“চা খাইয়েছো বলে তোমাকে গুলি করা যাবে না? মেয়েদের পাছা দেখার অপরাধ কি চা খাওয়ালেই মাফ হয়ে যাবে?”

পরীক্ষার হল এবং পিস্তলের নলের ভুলদিকে থাকলে মানুষের বুদ্ধি দ্রুত খোলে। চাওয়ালা এবার একটা দারুণ যুক্তি দিলো।
“কিন্তু আপনার পাছা তো দেখি নাই।”

জামাল সাহেবকে প্রভাবিত মনে হচ্ছে না। তিনি পিস্তলটা আরও ঠিক করে তাক করলেন। এখন ঘোড়া চাপলেই নিরীহ চাওয়ালার বুকটা ফুটো হয়ে যাবে।

মাথা নাড়লেন, “তুমি একটা সোশাল কন্ট্রাক্ট ব্রিচ করেছো, বাবা। পাছা অন্যেরটা দেখেছো ঠিক। তবে যে সামাজিক কন্ট্রাক্ট ভাঙে সে বিপদজনক। সে আমাকে চায়ের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিলেও অবাক হবো না।”

বাদশা মিয়া যদি টাইমমেশিনে চড়ার সুযোগ পেতো, চায়ে অবশ্যই বুড়োকে বিষ মিশিয়ে দিতো। কিন্তু সব কথা বলার একটি স্থান, কাল ও পাত্র বিবেচনার বিষয় আছে। এই মুহূর্তে তিনের একটিও অনুকূল নয়।

“স্যার, আমি মরলে আমার বউ তো না খায়া মইরা যাইবো।”
“যুক্তিটা বেটার। কিন্তু অকাজের। কাজ তো সব তোমার বউ-ই করছে। চা সে বানায়, তুমি কেবল সারাদিন তা নিয়ে বসে থাকো। এটা সে নিজেও করতে পারবে।”
“তাইলে আমার পোলারে দেখবো কেডায়?”

জামাল সাহেব পিস্তলটা নামালেন। ছোট পিস্তল। সোভিয়েত ডেরিঞ্জার। ব্যাগে ভরে না ফেললেও যে পথচারীরা লক্ষ্য করবে এমন নয়।

“ছেলের বয়স কতো?”
“তিন মাস, সার।” কুঁই-কুঁই করে বলল বাদশা মিয়া।
“তাহলে মেয়েদের পাছা দেখছো কেন?”
“পোয়াতি হওয়ার পর তো বউয়ের কাছে যাইতে পারি না বহুদিন। পরকিতি স্যার শুন্যস্থান সইয্য করে না।”

ধর্ষকটার কথা শুনে জামাল সাহেবের ডেরিঞ্জার আবার উঠে যেতে চাইছিল। সর্বশক্তি দিয়ে তা নামিয়ে রাখতে হলো তাকে। চা শেষ হয়েছে। কাপটা ফেলে দিয়ে দোকানদারকে বিশটা টাকা দিলেন তিনি।

“আমাকে বলো তো, তোমরা সিগারেটওয়ালারা, রিকশাওয়ালারা মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেয়েদের শরীর দেখো কেন? এদের কখনো পাবে না, এজন্য?”
“কি জানি, সার। কিন্তু এইডা জানি যে আমাগোরে সব মাইরা লাইতে পারবেন না। আপনাগো সব কাম আমরাই তো কইরা দেই। রিকশা চালাই। বাড়ি বানায়া দেই। জুতা পালিশ কইরা দেই। গরিব মানুষ মাইরা কি আর দেশ চলবো?”

ডেরিঞ্জারটা ব্যাগের মধ্যে ভরে ফেললেন জামাল সাহেব। অমায়িক একটা হাসি হেসে জানতে চাইলেন, “নাম কি তোমার?”
“বাদশা মিয়া, সার।”
“সব গরিব মানুষ মেরে ফেললেও দেশ চলবে, বাদশা মিয়া। লোকে হেঁটে হেঁটে ৫ কিলোমিটার যাওয়া শিখে যাবে। বিল্ডিং বানানো কিংবা জুতো পলিশ থেমে থাকবে না। তুমি একটা কথা অন্তত ঠিক বলেছো। প্রকৃতি শুন্যস্থান পছন্দ করে না।”

বাদশা মিয়া দেখলো বুড়োটা আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে।
ধীরে ধীরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে।
তার কোন তিন মাসের ছেলে নেই।
বুড়ো ধরতে পারেনি।

২.

বিশাল এই পার্টি অফিসের বিশাল সব ডেস্ক। তারই অন্য প্রান্তে জামাল সাহেব বসে আছেন। অন্যপাশে বসে থাকা পার্টির এক কেরানি। কেরানির ভাবনাখানা দেখে মনে হচ্ছে সে সাক্ষাত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। একটার পর একটা টেলিফোন কানে তুলে যাচ্ছে।

জামাল সাহেবকে চা খেতে দেয়া হয়েছে। এই চা বাদশা মিয়ার চা থেকে বাজে। তবে চা-তো চা-ই। সামনে একটা চায়ের কাপ আর কোলে একটা পিস্তল নিয়ে বসে আছেন তিনি। দুটোর কোনটাই স্পর্শ করছেন না। মেজাজ বিগড়ে আছে।

অবশেষে যেন তিন ঘণ্টা পর মুখ তুললো করণিক। তারপর বললো, “আরেকটু বসেন, প্লিজ। স্যার বলেছেন এই মিটিংটা শেষ হওয়ার আগে তাকে যেন বিরক্ত না করি।”

জামাল সাহেব চাইলে বলতে পারতেন এই পার্টি তিনিই পত্তন করেছিলেন। কোন জমিদারবাবুর কোন মিটিং নেই, থাকতে পারে না তাকে ছাড়া। মুখ তুলে ঘরটা দেখলেন তবুও। বিশ বছর আগে বাড়িটা কিনেছিলেন তারা। তিনি আর আরও ছয়জন। এই পার্টি গড়েছেন। পার্টি এখন ক্ষমতায় চলে গেছে। তার বন্ধু বনে গেছেন প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কালচার তারাই দূর করেছিলেন বিশ বছর আগে। নইলে হয়তো প্রধানমন্ত্রী হতো।

কিন্তু এসবের কিছুই তিনি বললেন না। ক্ষমতার অপব্যবহার তিনি সব সময় ঘৃণা করেছেন। তিনি একটা বাজে চায়ের দামী কাপে চুমুক দিলেন।

অবশেষে দরজাটা খুললো। ভেতর থেকে অসামান্য এক সুন্দরী মেয়ে বের হয়ে এলো। জামাল সাহেব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। এই মেয়ের হলিউডে থাকা উচিত, অথচ ‘আমাদের দেশ’ পার্টি অফিস থেকে বেরুচ্ছে। পার্টি প্রধানের জরুরী মিটিংয়ের সময় কেন তাকে বিরক্ত করা যাবে না তাও বোঝা গেল।

কেরানি তাকে ভেতরে যাওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করলো।

সালেহউদ্দীন প্রধানের বয়স এখন চল্লিশ। মাথার সামনে টাক পড়ে যাচ্ছে। ঘরটা দেখে হাসি পেলো জামাল সাহেবের। খুব কেতাদুরস্ত এক সাজ। সিলিকন ভ্যালির যে কোন সিইওর অফিসের সাথে পাল্লা দিয়ে তাল মেলাতে পারবে। তফাত একটাই। এক দেয়ালে ঝুলছে ছয়জনের এক ছবি। পার্টি ফাউন্ডার। জামাল সাহেবের ছবিও আছে।

ঠিক মাঝখানে থাকা লোকটার চোখমুখ উজ্জ্বল। কায়সার প্রধান। তখন তরুণ ছিল। এখন সে বুড়ো হয়েছে। সিটিং প্রেসিডেন্ট। তারই সুযোগ্য সন্তান পার্টির প্রধান সালেহউদ্দীন প্রধান পার্টি অফিসে তরুণীদের সাথে যৌনসঙ্গম করে বেড়াচ্ছে।

তাকে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো পার্টি হেড।
“আরে জামাল আংকেল। আপনাকে বসিয়ে রেখেছিল নাকি বাইরের গাণ্ডুটা? ওর চাকরি যদি আমি না খেয়েছি-”
জামাল সাহেব তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরালেন, “আহ, ছাড়ো। তোমার গা থেকে বীর্যের গন্ধ আসছে।”

ভ্যাবাচেকা খেয়ে সরে গেল সালেহ। তবে এই মানুষগুলোকে সে চেনে। প্রত্যেকেই ক্র্যাক। যা বলার, সরাসরি বলে। এভাবেই নতুন খোলা এক পার্টি থেকে বাংলাদেশের সরকার গড়ে তোলা গেছে। মানুষ রাজনীতিবিদদের থেকে আর ঘুরানো-পেঁচানো আলাপ দেখতে চায় না। তারা চায় সরাসরি কথা। সত্য কথা। হাজারো মিথ্যুকের ভীড়ে সত্যের রাজনীতি করে দ্রুত জনতার মাথার মুকুট এই পার্টি হয়েছে।

“সরি, আংকেল। এই মেয়েটা আমার মাথা খেয়ে দিয়েছে।”
“নাম কী?”
“নিবুলা।”
“নিবুলা কারো নাম হয় নাকি?”
“নিবুলা চেনেন না? মহাকাশে থাকা গ্যাস আর ধূলোর মেঘ। মহাকাশে অনেক সময় যে আমরা সুন্দর রঙ দেখি ওটা নিবুলার সৃষ্টি। সূর্য তারা দিয়ে তো আর ওসব পেইন্টিং মার্কা স্পেসের ছবি হয় না। সবই নিবুলার কারসাজি।”

জামাল সাহেব বুঝতে পারলেন।

“আংকেল, ব্র্যান্ডি চলবে নাকি?” তাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজের চেয়ারে ফেরত গিয়েই প্রথম এই কথাটা বলল কর্ণধার।
“এসবই করছো তাহলে। অফিস আওয়ারে মেয়ের সাথে শুচ্ছো। ব্র্যান্ডি গিলছো।”
“খুব চাপ তো নেই। নইলে অন্য অবস্থা।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিস্তলটা বের করে টেবিলের ওপর রাখলেন জামাল সাহেব। তারপর সরাসরি সালেহের চোখের দিকে তাকালেন।

“চিনেছো?”
“জ্বি। এটা বাবার কালেকশনে ছিল। আপনার পচাত্তরতম জন্মদিনে আপনাকে উনি উপহার দিয়েছিলেন।”
“এটা আমার প্রিয় একটা কালেকশন। প্রায় পরিষ্কার করি। এখনো গুলি করতে সক্ষম।”

সালেহ বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলো। জামাল আংকেল কি তাকে গুলি করার হুমকি দিলেন?

তার বিভ্রান্তি দূর করতেই পরিষ্কার করলেন বৃদ্ধ, “বলো তো, তোমাকে কেন গুলি করে মেরে ফেলা উচিত হবে না? পার্টি শুনলাম গত চার বছর কিছুই করেনি। এখানে ওখানে সভাসমাবেশের নামে করেছে শো-ডাউন। সরকারি পার্টি, পুলিশ থেকে শুরু করে পাড়ার মাস্তান, সবাই সাপোর্ট দিয়েছে। গৎবাঁধা বুলি বলে গেছে তোমার নেতাকর্মী। জনতাকে থোড়াই কেয়ার করেছে।”

মাথা দোলালো সালেহ। অভিযোগের প্রতিটাই সত্য। জামাল আংকেলের হাতের লক্ষ্য দারুণ। বিশ বছর আগের ছ’ মাস ধরে চলা বিপ্লবে তিনি একাই নাকি সাড়ে ছয়শ প্রতিপক্ষ ঘায়েল করেছেন। এই বয়সেও হাত একেবারে স্থির। তবে তা নিয়ে বিচলিত হচ্ছে না সে। এই বুড়োগুলোর সবাই ক্র্যাক এটা দেশের মানুষ জানে।

“আংকেল, আমরা তো মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিনাশ করেছি।”
মাথা নাড়লেন জামাল সাহেব, “তোমরা করোনি। সেটা আমরা করেছি। তোমার নেতাদের নামে টাকা দিয়ে অভিনেত্রীদের বিছানায় তোলার কথা শোনা যায়। হুমকি দিয়ে চাঁদাবাণিজ্য করছে এমন অভিযোগও আছে। আমায় বলো তো, তোমার দল এককালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধিদের বিনাশ করেছে এই যুক্তিতে কি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা চলে?”

“না।” এক সেকেন্ড ভেবে একমত হলো সালেহ, “কিন্তু আমরা না থাকলে ইসলামিস্টরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। সমকামীরা প্রতি মাসে এখন বাংলাদেশে গে প্যারেড করতে পারে, তখন তাদের ধরে ধরে জবাই করা হবে। মেয়েরা কক্সবাজারে বিকিনি পরে শুয়ে আছে, কেউ টু শব্দ করে তাদের বিরক্ত করছে না। তখন করবে। প্রগতিশীল একটা সমাজে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তর তর করে র‍্যাংকিংয়ে আগাচ্ছে, সেটা বন্ধ হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি-”

পিস্তল নাচিয়ে তাকে থামালেন জামাল সাহেব, “একটা মেয়েকে পাওয়ার ডায়নামিকসের চাপে ফেলে তুমি এই অফিসে একটু আগে ধর্ষণ করেছো। তোমার কি মনে হয় ইসলামিস্ট ঠেকানো, সমকামীদের নিরাপত্তা, মেয়েদের পোষাকের স্বাধীনতা- কোনটাই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জরুরী?”

“ধর্ষণ?” ক্রোধের ছায়া পড়লো সালেহের মুখে। “নিবুলা নিজের ইচ্ছেয় আমার সাথে দেখা করতে আসে।”
“আসতে পারে। তাতেই যে কনসেন্ট এমন তো নয়। তোমার সাথে তার পরিচয় নিশ্চয় এক চায়ের দোকানের সস্তা আড্ডায় নয়। কেউ আসলেই তুমি তাকে আসতে দেবে কেন? তোমার বাবার লেখা ‘কনসেন্ট’ বইয়ের তিনশ আঠারো নম্বর পাতাটা খুলে দেখো। কোন কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় তোমার কাছে এলেও তা কনসেন্ট নয়, বরং ধর্ষণ তা লেখা আছে। পড়োনি?”

মাথা হেঁট হয়ে গেল সালেহের। বুঝতে পারছে জামাল আংকেল আসলে তাকে সম্পূর্ণ অধিকার নিয়েই গুলি করতে পারবে। ছয়শ পঞ্চাশজন খুন করা হাত নিশ্চয় একান্ন পুরো করতে কাঁপবে না।

“এক অন্যায় দিয়ে অন্য অন্যায় ডিফেন্ড করা, বড় বিপর্যয় ঠেকাবার জন্য ছোট কুকর্ম লুকিয়ে ফেলার কালচার আমাদের পার্টি করে?”

“না।”

“প্রতিটা কর্ম আলাদা করে বিচার করি আমরা। আগে দেশোদ্ধার করেছো কি না সেজন্য ছাড় নেই। তা কি তুমি জানো না?”

মাথা হেঁট হয়ে থাকলো সালেহের।

পিস্তল নাচিয়ে তাকে দাঁড়াতে বললেন জামাল সাহেব।
“ওই দেয়ালের কোণে হেঁটে যাও। পার্টি তো থাকবে। তোমার ব্রেইন দিয়ে গোটা ডেস্কটা মাখামাখি হয়ে গেলে পরের লোকটা বসবে কী করে এখানে?”

সালেহের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আংকেল মনে হচ্ছে আসলেই গুলি করবেন।

“কিন্তু স্যার-”
“আহা, বিকল্পের কথা বলবে না। আজ সকালে এক ফকিন্নি চাওয়ালা আমাকে দারুণ এক শিক্ষা মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতি শুন্যস্থান পছন্দ করে না।”

চল্লিশ বছরের সালেহকে এখন দেখতে লাগছে আশি বছরের এক বুড়োর মতো। চকচকে চেহারাটা ঝুলে গেছে। দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকলো লোকটা। বিতৃষ্ণা হলো জামাল সাহেবের। এই ধরনের ছেলেরা বিশ বছর আগে থাকলে মোল্লারাই সাফ করে ফেলতো তাদের। এ হয়েছে এখন পার্টি লিডার।

নিঃশঙ্কচিত্তে জামাল সাহেব কাঁপতে থাকা একজোড়া বিচি বরাবর গুলি করলেন।
মোটা একটা লোক গায়ের জোড়ে পাদ দিলে যতখানি শব্দ হয়, তার থেকেও কম শব্দ করে গুলি হলো।

পরিশিষ্ট

প্রেসিডেন্ট কায়সার প্রধানের ফোনটা বাজছে। নামটা দেখে ধরলেন তিনি।
“হ্যাঁ, জামাল। কী ঘটনা?”
“ব্রো, তোমার ছেলের বিচিতে গুলি করতে হলো। পার্টির লিডার লাগবে নতুন।”
“অ্যাঁ?”
“তোমার ছেলের বিচিতে-”
“প্রথমবারেই বুঝেছি। বাঁচিয়ে রেখেছো নাকি শেষ করে দিয়েছো?”
“তোমার ছেলে বলেই বাঁচিয়ে রাখলাম। কাজটা বোধহয় ঠিক হয়নি। বহুদিন পর আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলাম।”

ফোনটা রাখলেন কায়সার প্রধান। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
রাজনীতি করতে করতে মনে হয় ছেলেটাকে মানুষ করার সময় পাননি। বিচিতে গুলি খাবে এতে আর আশ্চর্যের কী?

তবে ওই এক মুহূর্তই। দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্য এক মুহূর্তের থেকে বেশি সময় পাওয়া যায় না এ পদে।
এনক্রিপ্টেড ফোনটা আবার টেনে নিলেন তিনি। পার্টির নতুন লিডার ঠিক করার কাজে তার ঢোকা উচিত নয়। কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট সৃষ্টি হয়। তবে এটা একটি বিশেষ ঘটনা।

জামালের বই ‘নেপোটিজম’ সাড়ে চারশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে আটকে আছেন গত দুই বছর ধরে। আরও আগেই ওটা শেষ করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো সালেহের বিচিজোড়া আজ অক্ষত থাকতো!

কে বলতে পারে।

— ০ —
কিশোর পাশা ইমন/ ২৮শে মে, ২০২৫ 
#

No responses yet

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Page Views
3723

JOIN US!

Join Us!