আপনারা বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছেন। এখানে সব সময় নির্দেশ, সিদ্ধান্ত, বা আদর্শ ওপর থেকে আসে। নিচের মানুষ বা স্তরগুলো তা অন্ধভাবে অনুসরণ করে। নেতৃত্ব বা ক্ষমতার কেন্দ্র যা বলবে তা-ই। চেইন অফ কমান্ড। গদগদ ভাব। উলু উলু অবস্থা।
রাষ্ট্রপ্রধান সিদ্ধান্ত নেবেন, জনগণ মেনে চলবে। একজন মুফতি সিদ্ধান্ত দেবেন, হাজার হাজার মানুষ প্রশ্ন না করেই মেনে নেবে। দলে কেন্দ্রীয় কমিটি ঠিক করবে কে নেতা হবে এলাকায়। আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ যেদিন কমিটি দেয় সেদিন হৈ হৈ পড়ে যায়।
এর সমস্যা হচ্ছে আমরা দেখতে পাই কর্মীদের মধ্যে প্রশ্নহীন আনুগত্য। ব্যক্তি চিন্তা বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। একদল শেখ হাসিনার জিকির করছে। আরেকজন তারেক জিয়ার নামে তসবি জপছে। এতে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ বাড়ে। শোনা গেছিল নেত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য বিশ লাখ টাকা নিতো ছাত্রলীগের কিছু নেতা।
এই ধারাকে বলা হয় টপ ডাউন ধারা। “আগে বাংলাদেশি” এতে বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে বটম-আপ ধারায়।
অর্থাৎ সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব গঠিত হবে ব্যক্তি বা স্থানীয় স্তর থেকে। কমিটি আসবে নিচ থেকে, অর্থাৎ নেতা নির্বাচিত হবে নিচের লোক থেকেই। এরা জানবে কে কত কাজের ছিল পথে। নিজেদের চিন্তা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাউকে নির্বাচিত করা হবে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা। এই নেতারা নিজেদের সমান নেতাদের চিনবেন। তারা তাদের মধ্য থেকে নির্বাচন করবেন এর ওপরের নেতা। তারা আবার নির্বাচন করবেন তার ওপরের নেতা। দলের ‘প্রধান নাগরিক’কে এভাবেই নির্বাচন করবেন তার ঠিক নিচে থাকা পাঁচজন ‘স্থপতি’। ওই শুন্য পদের জন্য লোক আসবে তার নিচের স্তর থেকে নির্বাচিত হয়ে।
এভাবে একজন নির্দলীয় ব্যক্তি যোগ্যতার ভিত্তিতে স্থানীয় নেতা হয়ে পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যাবেন। যাওয়ার সুযোগ থাকবে। সমাজে যে সমস্যাগুলো মানুষ নিজের চোখে দেখে, সেই সমস্যা নিয়ে রাজনীতি গড়ে ওঠে, কাজেই তারা ওই সমস্যাগুলো নিয়ে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করবেন। এতে করে ব্যক্তির সম্মান ও স্বাধীনতা টিকে থাকবে। নেতৃত্ব হবে দায়বদ্ধ।
দ্বিতীয়ত ব্যক্তি পর্যায় থেকে যেহেতু এই রাজনীতি, জনগণের প্রতিও একই দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। অর্থাৎ মুসলমান সমাজের দিকে যদি চোখ ফেরানো যায়, তাহলে ধরা যাক তৌহিদী জনতা আম্ব্রেলার নিচে আছেন সকল মুসলমান। তার নিচের শাখায় আছেন সুন্নি, শিয়া। আছেন সালাফি। আছেন হানাফি। আছেন আহমাদি। আছেন কাদিয়ানি। এদের অনেকেই হয়তো একে অন্যকে গলদ মুসলমান বলেন। কিন্তু এর নিচের স্তরেই আমরা পাবো সবাইকে, ব্যক্তিপর্যায়ে, যাদের পরিচয় কেবলই মুসলমান।
“আগে বাংলাদেশি” ওপরে ইসলামি উম্মাহকে গুরুত্ব দেবে না। সে গুরুত্ব দেবে একেবারে তলে থাকা বেচারা মুসলমানকে। সে শিয়া, সুন্নি, হানাফি, কাদিয়ানি, নাকি অন্যকিছু তা বিবেচ্য নয়। যতক্ষণ না ব্যক্তি মুসলমানের দরকার মিটছে, আমরা গোত্রে যাবো না। যতক্ষণ না গোত্রের দরকার মিটছে, আমরা উম্মতের কাছে যাবো না।
সমস্যা শোনার ক্ষেত্রে আমাদের চোখে ব্যক্তি সব সময় গোত্র থেকে বড় এবং গোত্র সব সময় জাতি থেকে বড়। কেন? কারণ এতে করে সবচেয়ে তুচ্ছ সদস্যটিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশের বিগত বছরের সকল রাজনীতিতে গোত্রের জন্য অসহায় মানুষকে পাত্তা দেয়া হয় না। গ্রামের এক অসহায় লোক বিচার খুঁজে পায় না সাধারণতঃ। তবে যে গ্রামে দশজন একত্রিত হতে পেরেছে তারা একটা মিছিল-টিছিল করে নিজেদের চাহিদা জানান দিয়ে ঠিকই অধিকার বুঝে নিচ্ছে। রাষ্ট্র ওই লোকটাকে দেখে না যে মিছিলে যাওয়ার মতো দশজন যোগাড় করতে পারেনি। ওই লোকটাকে রাজনৈতিক দলগুলোও দেখে না।
তাদের হয়ে কথা বলবো আমরা।
No responses yet