বিশেষ করে বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রে, যেটি কোন একটি দেশের প্রশাসন করতে চাইছে তার পেছনের যুক্তি ও কার্যকারণ আগে এস্টাবলিশ করতে হয়। এজন্য কোথাও ডলার ঢালার কোন প্রয়োজন পড়ে না। ধরা যাক একটি অঞ্চলে কোন দেশের সরকার ঢুকতে চায় এবং সেখান থেকে কোবাল্ট উত্তোলন করতে চায়। তারা সেখানে কোন এক অনাচারকে ফোকাস করতে পারে। ওই অনাচার উক্ত অঞ্চলে আগে থেকেই প্রচলিত আছে। নতুন করে ডলার বিনিয়োগ করে তা জন্ম দেয়ার দরকার হচ্ছে না। ফোকাস করলে এবং ঘন ঘন সে বিষয়ে খবর প্রকাশ করলে অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রবেশের বৈধতা তৈরি হয়। তখন তারা তাদের দরকারি সংস্কার করতে পারে। এর পেছনে রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক কিংবা উভয় উদ্দেশ্যই থাকতে পারে।

ওই অনাচার সমাজে বিদ্যমান এটা প্রতিষ্ঠিত না করে একই কাজ যদি করা হতো, তাহলে সমাজের একটা বড় অংশ তার বিরোধিতা করতো। কিন্তু যেহেতু সমাজ স্পষ্টই দেখতে পেল যে এমন একটা খারাপ কাজ হচ্ছে, তারা এর বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে স্বাগতম জানায়। এটাই সেই শক্তিকে নৈতিক একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়।

ধরা যাক রাজনৈতিক কারণে কোন একটি অঞ্চলের উগ্র মৌলবাদের মোকাবেলা করা জরুরী। তখন মৌলবাদীদের নারীদের প্রতি আগ্রাসন ও সহিংসতায় ফোকাস করতে হবে। এতে করে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হলে জনগণ এতে কিছু মনে করবে না। সমর্থন দেবে।
মৌলবাদীদের এজন্য ডলার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তারা স্বভাবগতভাবেই এমন আচরণ করে থাকবে।

আওয়ামী লীগের বিতাড়ণের ক্ষেত্রে এই কাঠামোই ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ আওয়ামী লীগকে ডলার দিয়ে বাধ্য করেনি নির্বাচন কারচুপি করতে, পেশীশক্তির বাহুল্য চর্চা করতে, লেখালেখির কারণে মানুষকে কারাগারে পাঠাতে, ছাত্রদের মারধোর করতে। উল্লেখ্য, যে পরিমাণ ক্ষমতা আওয়ামী লীগের ছিল তারা প্রতিটা এজেন্ডাই আলোড়ন না তুলে প্রয়োগ করতে পারতো।

একটি ভালো উদাহরণ আবরার ফাহাদের ওপর নৃশংস অত্যাচার ও হত্যা। ছাত্রলীগ যদি তার সাথে মৌলবাদের সংশ্লিষ্টতা বের করতে পারতো, তাহলে তারা চাইলে অনায়াসে একটি জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলন তৈরি করে ক্যাম্পাস উত্তাল করতে পারতো। দাবী জানাতে পারতো উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতার শীর্ষে ছিল, এটা তারা বাস্তবায়ন করতে পারতো। কিন্তু তা না করে খাসলতের দোষে তারা একজন নিরস্ত্র মানুষকে বিনা কারণে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে ফেললো। এতে করে বিনা ডলার খরচাতেই ছাত্রলীগকে ধ্বংস করার নৈতিক ভিত্তি তৈরি হলো।

‘আগে বাংলাদেশি’ দরকারি সংস্কারের ক্ষেত্রে এইধরনের ফ্রেমিংয়ের ব্যাপারে আগ্রহ রাখে। এই ধরনের ফ্রেমিং নৈতিকভাবে সঠিক এবং এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। ‘আগে বাংলাদেশি’ চায় একটি প্যাটার্ন বের করতে যেখানে ব্যক্তিসত্তাকে ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়। এসব ঘটনার দায় একদমই যে অত্যাচারটি করছে, তার। কেউ তাদের বাধ্য করেনি, কেউ তাদের পয়সা দেয়নি, তারা করছে স্বভাবে। এই স্বভাবটিই অত্যাচারীর দুর্বলতা। তারা চাইলেও থামতে পারবে না। ব্যক্তিস্বাধীনতায় যারা হস্তক্ষেপ করে তাদের কোন যুক্তিতেই তা থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। ঠিক যেমন ছাত্রলীগ অতিরিক্ত পেশিশক্তির প্রয়োগ করে অভ্যস্ত ছিল, অথচ তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মোকাবেলা করতে পারতো।

এ ধরনের ঘটনাগুলোকে পুঁজি করে সামাজিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে ‘আগে বাংলাদেশি’।

#

No responses yet

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Page Views
3710

JOIN US!

Join Us!